এগ ফুড কি এবং পাখিকে কেন খাওয়ানো হয়?
মুরগি/ কোয়েল এর ডিম ও বিভিন্ন শাকসব্জি এর সমন্বয়ে তৈরী পাখির নরম খাবার কে এগ ফুড বলে। যেসব কারণে পাখিকে এগ ফুড খাওয়ানো হয় –
১। ডিম এ প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা পাখির সরইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে ব্রিডিং এর সময় প্যারেন্টস ও বেবী - উভয়ের জন্যই জরুরি
২। অনেক পাখি সবরকম শাক-সবজি খায় না তাই এগ ফুড এ সবকিছু একসাথে মিশিয়ে দিলে সবরকম উপাদান খাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৩। বেবী দের জন্য নরম খাবার খেতে সুবিধা হয়, প্যারেন্টস রা যেহেতু নিজে খেয়ে বেবী দের খাওয়ায়, সেহেতু নরম খাবার দ্রুত খেতে পারে এবং নিজে খেয়ে বেবী দের খাওয়াতে সুবিধা হয়।
৪। এগ ফুড এ ডিম ও শাক-সবজির সমন্বয়ে এক ই সাথে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি এর যোগান হয় বলে পাখির সাস্থ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এগ ফুড এর কিছু সমস্যা এবং সাবধানতা –
১।এগ ফুড পাখির জন্য পুষ্টিকর একটি খাবার। কিন্তু এই এগ ফুড ই পাখির স্বাস্থ্য এবং জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে যদি এগ ফুড এ ব্যবহৃত ডিমটি ফার্মের মুরগির ডিম হয়। ফার্মের মুরগিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পালন করা হয় খুব স্বল্প পরিসরে, ফলে এর ডিম এর গুণগত মান খুব নিম্ন হয়। ফার্মের মুরগিকে দ্রুত বড় করার জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ খাওয়ানো হয়। এছাড়া । ফার্মের মুরগি খুব সহজেই রোগ গ্রস্থ হয় বলে এদের কে নিয়মিত মাত্রারিক্ত এন্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ খাওয়ানো হয়। ফার্মের মুরগির খাদ্য খুব নিম্ন মানের এবং অনেক ক্ষেত্রে বিষাক্ত। সম্প্রতি কিছু বৈজ্ঞানিক জরিপে দেখা গেছে যে মুরগির খাদ্যে প্রোটিন হিসাবে বাবহৃত হচ্ছে চামড়া খারখানার চামড়ার উচ্ছিষ্ট অবর্জনা যেগুলোতে ক্রোমিয়াম সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিকাল বিদ্যমান,যা মানুষের শরীরের সহনশীলতার মাত্রার অনেক বেশি এবং পাখির জন্য মারাত্মক|
২| দেশী মুরগির ডিম বা ঘরে পালা কোয়েল এর ডিম দিয়ে এগ ফুড তৈরী করলেও, ডিম পাখিকে নিয়মিত দেয়ার বেশ কিছু সমস্যা আছে। ডিম পাখির প্রাকৃতিক ডায়েট এর মধ্যে পরে না। মুরগি বা কোয়েল বাজরিগার/ককাটেল/লাভ বার্ড /ফিঞ্চ এর চেয়ে অনেক বড় পাখি তাই এদের ডিম এসব পাখিদের জন্য সহজপাচ্য নয়। তাই নিয়মিত ডিম খাওয়ানো পাখির স্টমাক এর জন্য স্ট্রেস ফুল।
৩। নিয়মিত ডিম খাওয়ালে পাখির স্টমাক ডিস অর্ডার সহ বিভিন্ন স্টমাক/ক্রপ ইনফেকশন দেখা দেয়
৪। পাখিকে এগ ফুড দিলে সেটা ১ ঘন্টার বেশি রাখা কোনো অবস্থাতেই ঠিক না কারণ এতে দ্রুত ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেই
৫। নিয়মিত এগ ফুড খাওয়ালে বাচ্চা ও বড় পাখি - উভয়ের এ হজম ক্ষমতা হ্রাস পায় কারণ, পাখিরা প্রাকৃতিক ভাবে এধরনের নরম খাবারে অভ্যস্ত না। এছাড়া এভাবে খাওয়ার অভ্যাস করলে পরবর্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই পাখি কাচা শাক-সবজি-ফল খেতে চায় না।
৬। এগ ফুড তৈরির রেসিপি তে সিদ্ধ শাক-সবজি ব্যবহার করলে শাক সবজি এর গুন বেশিরভাগ এ চলে যায়। ফলে পখি সেটা অনেক বেশি পরিমানে খেলেও পুষ্টি পায় অনেক কম।
এগ ফুড এর ব্যাপারে করণীয় -
১। এগ ফুড অবশ্যই দেশী মুরগির ডিম এর হতে হবে এবং এতে যেসব সবজি দিয়া হবে সেগুলো কাচা হতে হবে। দেশী মুর্গিকেও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর খাবার খাবন হয় বলে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ডিম তা কতটুক নিরাপদ, সেটা নিশ্চিত হব না গেলেই ডিম ব্যবহার না করাই ভালো।
২। সেদ্ধ শাক-সবজি এর গুনাগুন বেশির ভাগ এ কমে যায় / নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশি খেলেও পুষ্টি কম পাওয়া যায়। এছাড়া সেদ্ধ শাকসব্জি নিয়মিত খাওয়ালে পাখির পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী থাকেনা। তাই পাখিকে নিয়মিত কাচা শাক-সবজি দেয়ায় সবচেয়ে ভালো। প্রথম প্রথম কিছুদিন না খেলেও একসময় অবশ্যই খেতে শুরু করবে।
৩। পাখির শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন & অ্যামিনো অ্যাসিড এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন - সজনে পাতা (এতে ডিমের ২X প্রোটিন আছে ), বুটের ডাল সিদ্ধ (এতে ডিমের ১.২Xপ্রোটিন আছে ), ব্ল্যাক বীনস (এতে ডিমের ১.৮×প্রোটিন আছে)। এগুলো নিয়মিত দিলেও কোনো সমস্যা হবে না। ছোলা, বীনস ইত্যাদি সেদ্ধ অথবা অঙ্কুরিত করে দিতে হবে।
৪। অঙ্কুরিত বীজ (sprouted seeds) পাখির জন্য এগ ফুড এর চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর এবং জরুরি। এটি ব্যবহারে এগ ফুড এর ঝুকি গুলো ও যেমন নেই, তেমন সুবিধা ও উপকার ও অনেক বেশি। চেষ্টা করবেন এটি নিয়মিত দিতে। প্রয়োজনে শাকসব্জি এর সাথে ব্লেন্ড করে এগ ফুড এর মত করে দিতে পারেন।
৫। শাকসব্জি বড় টুকরা বা ছোট টুকরা করে দিলেই সবচেয়ে ভালো। যদি নরম খাবার বানাতে হয় তাহলে কাচা শাক সবজি ভেজিটেবল গ্রেটার দিয়ে ঘষে দিবেন, সেদ্ধ করবেন না।
কিছু প্রয়োজনীয় রেসিপি -
রেসিপি ১: এগ ফুড রেসিপি
উপকরণ -
১. দেশী মুরগির ডিম সিদ্ধ (ছোট টুকরা বা ভর্তা, কুসুম খুব সামান্য)
২. কাচা শাক-সবজি-ফল টুকরা বা ভেজেটেবল গ্রেটার দিয়ে ঘষে নেয়া (কুমড়া, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা , পেপে, সীম, ব্রোকলি, আপেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, জলপাই, বরই, স্ট্রবেরি )
উপকরণ গুলো একসাথে মিশিয়ে দিন|তৈরী হয়ে গেল সহজ স্বাস্থ্যকর এগ ফুড|
রেসিপি ২: এগ ফুড পরিপূরক রেসিপি
এগ ফুড বানাতে ডিমের পরিবর্তে এই উপকরণ গুলো ব্যবহার করুন -
১. সজনে পাতা (এতে ডিমের ২X প্রোটিন আছে )
২. বুটের ডাল সিদ্ধ (এতে ডিমের ১.২Xপ্রোটিন আছে )
৩. ব্ল্যাক বীনস (এতে ডিমের ১.৮×প্রোটিন আছে)
সজনে পাতা কাচা+ বুটের ডাল সিদ্ধ ৩০ মিনিট+ ব্ল্যাক বীনস সিদ্ধ ১ ঘন্টা . এবার ৩টা উপকরণ মেশান এবং পাখিকে খেতে দেন। . এর সাথে কিছু কাচা সবজি এবং ফল টুকরো করে বা ভেজেটেবল গ্রেটার দিয়ে ঘষে দিবেন (কুমড়া, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা , পেপে, সীম, ব্রোকলি, আপেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, জলপাই, বরই, স্ট্রবেরি ) .
রেসিপি ৩ : অঙ্কুরিত বীজ (sprouted seeds)
অঙ্কুরিত বীজ পোষা পাখির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। খোসা যুক্ত যেসব বীজ আমরা সাধারণত পাখিকে খেতে দেই সেসব বীজকে অঙ্কুরিত করে আমরা খুব সহজেই পাখির জন্য এই খাবারটি তৈরী করতে পারি।
উপকরণ - শস্য বীজঃ লাল/কালো চাল, ক্যানারি, নাইজার (চিনা ), কাউন, সরিষা, বাজরা, মুগ ডাল, ছোলা, ব্ল্যাক বীনস, ব্ল্যাক আইড পীস, সীম এর বিচি| ঔষধি/ভেষজ বীজঃ ব্রকোলি, মৌরি, মেথি, মূলা বীজ, লাল ক্লোভার
অঙ্কুরিত বীজ প্রস্তুত প্রনালী : ১। কিছু বীজ একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এর পরে একটি পরিষ্কার স্বচ্ছ কাচের পাত্রে অল্প একটু পানি দিয়ে(এমনভাবে পানি দিতে হবে যাতে বীজ ও পানি এক এ লেভেল থাকে পানি যেন বীজের উপরে উঠে না যায়।) ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২। কক্ষ তাপমাত্রায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কাচের জারটি এভাবে রেখে দিতে হবে। ৩। এর পর বীজগুলো আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। ৪। এই বীজ ও পাখিকে খেতে দিতে পারেন। অথবা আরও ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কাচের পাত্রটিকে এমন ভাবে রাখুন যাতে বাতাস চলাচল করে এবং বীজগুলো অঙ্কুরিত হয়। ৫। নির্দিষ্ট সময় পরে বীজগুলো অঙ্কুরিত হলে এগুলো পাখিকে খেতে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। বীজগুলো ১/২ চামচ অপরিশোধিত আপেল সিডার ভিনেগারে ১৫ মিনিট ধরে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজে যদি কোন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া থাকে তা দূর হবে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু এনজাইম, ভিটামিন ও মিনারেল বীজে যোগ করবে। আপেল সিডার ভিনেগার অবশ্যই জৈব (Organic),কাঁচা (Raw), অপরিশোধিত (Unfiltered) হতে হবে। এরকম আপেল সিডার ভিনেগারের একটি ভালো ব্র্যান্ড হলঃ Bragg with the “Mother” ৬। ১৫ মিনিট ধরে আপেল সিডার ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখার পরে অঙ্কুরিত বীজগুলোর ভালভাবে পানি ঝরিয়ে পাখিকে খেতে দিন.
৭। ফ্রিজে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে পাখিকে আবার খেতে দেয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে পানিতে এবং অপরিশোধিত আপেল সিডার ভিনেগারে ধুয়ে খেতে দিতে হবে। আর খাওয়ানোর আগে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন বীজ থেকে টক জাতীয় গন্ধ না আসে।
রেসিপি 8: পাখির বাচ্চার জন্য নরম খাবার/হ্যান্ড ফিডিং ফর্মুলা (soft food/handfeeding formula for baby birds)
বাসায় বানানো নরম খাবার ই বাচ্চার জন্য ভালো । কাউনের চাল সেদ্ধ , ব্রোকলি, শাকসব্জি (বরবটি , কলমি শাক), কুমড়া, মটরশুটি, ছোলার ডাল সেদ্ধ , আপেল, চাপা কলা , পেপে,স্ট্রবেরি, কাটলবোন এর গুড়া , সজনে পাতা , ঘৃতকুমারী, মধু এইসব একসাথে ব্লেন্ডার এ মিক্স করে পেস্ট এর মতন বানিয়ে চামচ দিয়ে বাচ্চা কে খাওয়ানো যায়| এর পরিবর্তে কাচা সবজি ও ফল ভেজিটেবল গ্রেটার এ ঘষে নিয়ে বাকি উপকরণগুলোর সথে হাতে মেখে দেয়া যায়।
রেসিপি ৫: ড্রাইফুড ফর্মুলা (হাই প্রোটিন+ভিটামিনস+মিনারেলস)
উপকরণ:
সজনে পাতা (ছায়ায় শুকিয়ে গুড়া করা) : ১/২ কাপ
বুটের ডাল গুড়া : ১/২ কাপ
হেম্প সীড গুড়া : ১/৪ কাপ
পোলাও চাল/ দেশী লাল চাল এর গুড়া: ১/৪ কাপ
উপরোক্ত উপকরণগুলো মিশিয়ে রাখুন। কাছের বোতল এ রাখবেন এমন জায়গায় যেখানে বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা না।
পাখিকে দেয়ার সময় হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পেস্ট এর মত বানিয়ে দিন। এতে কিছু এলো ভেরা এর শাস চটকে মিশিয়ে দিন। সামন্য খাটি মধু দিতে পারলে ভালো হয়। এটি যেকোনো পাখিকে দেয়া যায়, বাচ্চা পাখিকে হ্যান্ড ফিড করতে ব্যবহার করা যায়। যেকোনো কেনা এগ ফুড এর চেয়ে এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর কারণ এতে কোনো কেমিকাল নেই এবং সব পাখির শরীরের জন্য মানানসই।
# সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন A, B1, B2, B3, B6, B7, C, D, E, K. সজনে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস (৩০%) হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এতে ১৮ অ্যামিনো অ্যাসিড (সকল ৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড), ৪৭ সক্রিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ৩৬ এন্টি ইনফ্লামেটরিস রয়েছে. উপরন্তু সজনে পাতাতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রন বিদ্যমান|
# হেম্প সীড এর উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে (২৫%-৫০%, কোয়ালিটি এর উপর নির্ভর করে) এবং এই প্রোটিন খুব ই সহজ পাচ্য। বিভিন্ন রকম ভিটামিন & মিনারেলস এর পাশাপাশি এতে ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ও বিদ্যমান|
★শাক সবজি ফল দেয়ার আগে সবসময় বড় একবাটি পানিতে ভালমত ডলে ধুবেন ৩ বার|
★ফল দেয়ার আগে বিচি ফেলে দিবেন|
আর্টিকেল টি লিখেছেন: সিফাত ই রাব্বানী
(সার্টিফাইড এভিকালচারিস্ট আমেরিকান ফেডারেশন অফ এভিকালচার ইউ.এস.এ.,
ন্যাচারাল ট্রিটমেন্ট কনসালটেন্ট, অফ "দ্যা ফীগ ট্রি, ইউ.এস.এ.")
এই রকম তথ্য আরো চাই
ReplyDelete