যারা শখের বশে পাখি পালবেন তাদের জন্য

পাখি ক্রয়ঃ এই ধাপটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন। যদিও অনেকে বলেন শখের বশে পালবেন । কিন্তু কিনার সময় বেশিরভাগই ব্রিডিং পেয়ার খোজেন । অনেকে আবার এটা নিয়ে কটুক্তি করেন যে তিনি যদি পাখিপ্রেমিই হন তাহলে ব্রিডিং পেয়ার কিনছেন কেন!! সত্যি কথা বলতে আমি এতে খারাপ কিছু দেখি না। এতে তার পাখির প্রতি আরও আগ্রহ বাড়ে। একসময় দেখা যায় তার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু মাত্র ১ টি খাচা থাকবে আর এক জোড়া পাখি থাকবে , কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে দেখা যায় তার খাঁচার সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে কিনার সময় ব্রিডিং পেয়ার না কিনে সেমি এডাল্ট বা এডাল্ট কিনাই ভালো , তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি বেবি কিনেন। তবে নতুনদের এত ধৈর্য থাকে না। তাই সেমি এডাল্ট কিনলে ভালো। এতে পাখি আপনার পরিবেশে বড় হবে , আপনার পরিবেশ সহজে মেনে নিবে এবং ব্রিডিং এ ভালো ফল দিবে।



পাখি কোথা হতে ক্রয় করবেনঃ পাখি কিনার আগে খোঁজ নিবেন আপনার পরিচিত কেউ পাখি পালেন কিনা। তিনি যদি পাখি বিক্রি করেন তাহলে তার কাছে থেকে নিয়ে নিন। পরিচিত লোক আপনাকে ঠকাবে না। যদি এমন পরিচিত কাউকে না পান তাহলে BSB তো আছেই , বাবু ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে ভালো একজন ব্রিডারের কাছে থেকে কিনুন। দোকানের সব পাখি ই যে অসুস্থ থাকে তা না। তবে দোকানের পাখির প্রতি আমার বিশেষ এলার্জি আছে। ছোট বেলায় দোকান থেকে যত পাখিই কিনেছি পরদিন ই দেখতাম পাখি ঝিমানো শুরু করত। তাছাড়া আপনি যেহেতু নতুন তাই সুস্থ অসুস্থ পাখির মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না।

পাখির কিনে ঠকলাম নাতোঃ যারা পাখি কিনেন তারা পাখি কিনার পর একটা হতাশায় ভোগেন যে পাখি বেশি দামে কিনে ফেললাম নাতো? আমার বন্ধু তো আরও কমে কিনেছে। এমন কোন দুশঃচিন্তা করবেন না।এটা মুরগী না যে গন হারে সব গুলোর দাম একই। বাজির দাম অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তাই এটা হতাশ হবেন না কখনো ।গ্রুপের সাথে থাকেন আস্তে আস্তে সবই বুঝবেন। J

পাখির খাঁচাঃ খাঁচা কিনার সময় বড় দেখে কিনুন। ছোট খাঁচা কিনে পাখি কে কষ্ট দিবেন না। কমের ভিতর খাঁচা কিনতে চাইলে নিমতলিতে চলে যান। ২১৫-২২০ টাকায় যেই খাঁচাটা পাওয়া যায় সেটা এক জোড়া পাখির জন্য পারফেক্ট। খাঁচার সাথে পালস্টিকের একটা লাঠি দিবে সেটা ফেলে দিন। সেখানে গাছের ডাল শক্ত করে বেঁধে দিন।পাখি ব্রিডিং মুডে ছাড়া খাঁচায় হাড়ি দিবেন না।

পাখির খাবারঃ তিন ধরনের খাবার পাখিকে দিবেন। 
১. সিডমিক্স
২. এগফুড
৩. কাচা শাক সবজি
পাখিকে একটা রুটিন করে খাওয়ানো ভালো। সপ্তাহে ২ দিন এগফুড , ২ দিন শাক সবজি , বাকি তিন দিন সিডমিক্স। তবে চাইলে কমবেশি করতে পারেন।
  • সিডমিক্সের উপাদানঃ চীনা , কাঊন, তিশি, ধান, সূর্যমুখির বীজ ইত্যাদি
  • এগফুডঃ এগফুড যার যার উপর নির্ভর করে। সাধারনত ডিম, শাক সবজী , বিভিন্ন ডাল , সীডমিক্স সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে এগফুড বানানো হয়। আমি যেটা করি সীডমিক্স , কলমি শাক , একটা ডিম সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে নেই। আর যারা খুব বেশি ব্যস্ত থাকেন শুধু একটা ডিম সিদ্ধ করেও দিতে পারেন । নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। এছাড়া বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় , তবে তা মোটামোটি ব্যয় সাপেক্ষ ।
  • সবজীঃ কাচা শাক সবজীর মধ্যে কলমি শাকটা পাখির খুব প্রিয়। এছাড়া অন্যান্য শাক সবজী ও দিতে পারবেন।  

খাঁচা কোথায় রাখবেনঃ খাঁচা ছায়া যুক্ত খোলা মেলা পরিবেশে রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন পাখির গায়ে সরাসরি বাতাস যেন না লাগে।

পাখির বয়সঃ কত গুলো জিনিস দেখলে পাখির বয়স মোটামোটি অনুমান করা যায়। প্রথমত পাখির চোখ , বেবী পাখিদের চোখে কোন সাদা আইরিশ থাকে না। ৪-৫ মাসে পাখির চোখে আইরিশ দেখা যায় , এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা আরও স্পষ্ট হয়। আরেকটি হোল মাথার উপর বেশ সমান্তরাল ভাবে অনেক রেখা থাকে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা পিছনে সরতে থাকে।

ব্রিডিংঃ পাখির বয়স ৮ মাসের আগে কোন ভাবেই ব্রিডিং এ দেয়া উচিত নয়। ফিমেইল পাখির যখন নাক গাড় বাদামী হবে এবং মেইল পাখির নাক যখন গাড় নীল হবে তখন বুঝতে হবে পাখি ব্রিডিং মুডে আছে। এমতাবস্থায় হাড়ি দিবেন এবং সাগরের ফেনা দিবেন।
ডিমঃ পাখি সাধারনত ৩-১২ টি পর্যন্ত ডিম পারতে পারে।ডিম পাড়ার ১৮-২৪ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
ব্রিডিংএর সময় করনীয়ঃ পাখি যে দিন থেকে ডিম পাড়া শুরু করবে সে দিন থেকে ডিম পাড়ার শেষ দিন পর্যন্ত পাখিকে এগফুড দেয়ার চেষ্টা করুন। বাচ্চা ফুটলে সে দিন থেকে ৫ দিন পর থেকে টানা ৫-১০ দিন এগফুড দিন। আপনার বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠবে। আর সবচেয়ে আসল কথা হচ্ছে কৌতুহল বসত পাখিকে বার বার ডিস্ট্রাব করবেন না। ব্রিডিং এর সময় খাঁচা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।  
ব্রিডিং সক্রান্ত সমস্যাঃ
  • এগবাইন্ডিংঃ কম বয়সে ব্রিড করালে এই সমস্যা হয়। এই সমস্যা হলে পাখির ভেন্টে ডিম আটকে থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাখির মৃত্যু অনিবার্য। এক্ষেত্রে করনীয় – পাখির ভেন্টে অলিভ ওয়েল দেয়া।
  • ডিম না জমাঃ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দিন জমে না। এর প্রধান কারন মেটিং সফল না হওয়া। এয় ক্ষেত্রে দেখতে হবে খাঁচার লাঠিটা শক্ত ভাবে বাধা আছে কিনা। যদি সেটা ঠিক থাকার পরও এয় সমস্যা হয় তাহলে পাখিকে ১-২ মাস রেস্ট দিন এবং ভালো পুষ্টিকর খাবার(এগফুড) দিন।
  • খাঁচা থেকে ডিম ফেলে দেয়াঃ নতুন ব্রিডিং এ দিলে এই সমস্যা হয়। ১-২ মাস রেস্ট দিয়ে আবার ব্রিডিং এ দিন।
  • ডিম ভেঙ্গে ভিতরে বাচ্চা দেখা যাচ্ছেঃ অনেক সময় দেখা যায় যে ডিমের এক কোনা ভেঙ্গে ভিতরে বাচচা দেখা যাচ্ছে এবং নড়ছে। এক্ষেত্রে করনীয় হলো ডিম নিয়ে খুব সাবধানে ডিমের খোলস ভেঙ্গে বাচ্চা বের করা।
  • ফেঞ্চ মোল্টঃ এক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাচ্চা বড় হয়ে বেড়ে উঠলেও তাদের পালক গজায় না। এক্ষেত্রে প্রথনেই করনীয় হলো ব্রিডিং বন্ধ করা । এক্ষেত্রে বাচ্চাদের অ্যালোভেরা লাগানো যেতে পারে।

পাখিকে ঔষূধ যত কম পারা যায় খাওয়াবেন। ভালো থাকুক আপনার পাখি , বেঁচে থাকুক আপনার পাখি পালার আগ্রহ।


5 comments:

  1. Viya amar pakhir dimer boyos 1month

    pakhir dimer vitore onk ongso khali hoiya gese

    R dimer moddhe ekhino lal dekha jay

    Tate ki bassa hobe?

    R a obosthay ami ki korte pari?

    ReplyDelete
  2. আমার পাখি খাবারের পাএ তে ৬টা ডিম পেড়েছে এবং সকাল থেকে বিকাল পর্যনত ভালোই তা দেয় এবং বিকাল হলেই উঠে যায়।এখন কি করণীয়?

    ReplyDelete
  3. পাখিকে কি মুরগির ফিড খাওয়ানো যাবে?

    ReplyDelete
  4. আমি অনেক ছোট একটা মদনা টিয়া কিনেছিলাম,,,যখন তার বয়স ছিলো ১৭/২০ দিন,সে অনেক কথা বলতে পারে,কিন্তু ১ বছর নয় মাস পর সে একা একা ডিম দিলো,,,তারা কি পুরুস পাখি ছাড়া একাই ডিম দিতে পারে???

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাই আমি গতবছর আমার বন্ধুর টিয়া পাখি জোড়া ছাড়া ২ টা ডিম দিয়ে ছিল কিন্তুু বাচ্চা ফুটে নাই....?

      Delete